শ্রীলঙ্কায় ভারত-চীন ঠাণ্ডা যুদ্ধ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৫৮
শ্রীলঙ্কায় সাংবিধানিক সঙ্কট।রাজনৈতিক এই টালমাটাল পরিস্থিতির জেরে ভারত মহাসাগরীয় উপকূলে শুরু হয়েছে আধিপত্য কায়েমের ঠাণ্ডা যুদ্ধ। যার এক দিকে চীন, অন্যদিকে ভারত। যদিও কূটনৈতিক মহল মনে করছে, রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপাকসের হাত ধরে ফের দ্বীপরাষ্ট্রের সরকারের এক্কেবারে অন্দরমহলে ঢুকে পড়বে চীনা ড্রাগনরা। ক্ষমতা খর্ব হবে নয়াদিল্লির। চেষ্টার কসুর নেই অন্যদিকে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকেও।
রনিল বিক্রমসিঙ্গেকে সরিয়ে ফের ক্ষমতায় চীনের ‘মিত্র’ মহিন্দা রাজাপাকসে। ২০০৫ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত দশ বছরের শাসনকালে রাজাপক্ষে চীনের কাছ থেকে দেদার ঋণ নিয়ে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করেছিলেন। নতুন করে ক্ষমতায় এসে চিীকে তার প্রতিদান দিতে পারেন তিনি, এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। চীনও তার যথাযথ সদ্ব্যবহার করার এমন সুযোগ হাতছাড়া করবে না বলেই মত কূটনীতিকদের।
অথচ ঠিক বিপরীত অবস্থানে ছিলেন বিক্রমসিঙ্গে। তার পররাষ্ট্রনীতিতে চীন ছিল ব্রাত্য। চীনকে বাদ দিয়ে ভারত ও জাপানের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নতিই ছিল তার অন্যতম লক্ষ্য। সেই সুযোগে ভারতেরও বিক্রমসিঙ্ঘের উপর কিছুটা কর্তৃত্ব ছিল। রাজাপক্ষে ক্ষমতায় আসায় বিক্রমসিঙ্ঘের মিত্রদের ছেড়ে যে নিজের পুরনো বন্ধু চীনের উপরই বেশি ভরসা রাখবেন, তা বলাই যায়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করা সংস্থা ইউরেশিয়া গ্রুপের এশিয়ার ডিরেক্টর শৈলেশ কুমার যেমন বলেছেন, ফের কলম্বোর শেষ আশা হিসাবে উঠে আসতে চলেছে চীন। তার ভবিষ্যদ্বাণী, ‘‘নতুন করে চীনের জন্য দরজা খুলে দেবেন রাজাপাকসে। এই পরিবর্তনের ফলে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে আরো একবার ছড়ি ঘোরাবে চীন। কারণ সরকারে তাদের ‘বন্ধু’ রাজাপাকসে। যার অবস্থান বিক্রমসিঙ্ঘের ঠিক উল্টো।’’
আবার অতি সম্প্রতি আর এক দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে বেইজিং ঘনিষ্ঠ আবদুল্লাহ ইয়ামিন পরাজিত হয়েছেন। নতুন সরকার কার্যত চীনা-প্রভাব মুক্ত থেকে কাজ করতে চাইছে। সেই ক্ষমতা হারানোর ক্ষত নিয়ে ফুঁসছে ড্রাগন। মালদ্বীপের নতুন সরকারের ভারত-প্রীতির কথাও তাদের অজানা নয়। তাই শ্রীলঙ্কার উপর প্রভাব কায়েম করে প্রতিশোধের রাস্তাতেও হাঁটতে পারে বেইজিং।
কিন্তু ভারতও কি এত সহজে ছেড়ে কথা বলবে? নিজেদের ক্ষমতা খর্ব হতে দেখেও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? মোটেই নয়। ইতিমধ্যেই নয়াদিল্লি জানিয়ে দিয়েছে, শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। বেইজিং-নয়াদিল্লি দ্বৈরথে সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও নজর রাখছে পাশ্চাত্যও। অশান্তি এড়িয়ে সব দলই সংবিধান মেনে কাজ করুক, আর্জি জানিয়েছে আমেরিকা এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।
শ্রীলঙ্কায় সঙ্কট রূপ নিয়েছে সহিংসতায়
শ্রীলঙ্কায় পার্লামেন্ট অধিবেশন ডাকার জন্য সোমবার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার ওপর চাপ বেড়েছে। তিনি শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিঙ্ঘেকে বরখাস্ত ও আকস্মিকভাবে পার্লামেন্টে অধিবেশন স্থগিত করার পর দেশটিতে তীব্র সংকট শুরু হয়েছে।
এদিকে রাজনৈতিক এই সংকট সহিংসতায় রূপ নিয়েছে এবং এতে একজন প্রাণ হারিয়েছে। খবর এএফপি’র।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর রোববার শ্রীলঙ্কায় চলমান সাংবিধানিক সংকট নিরসনে আইনপ্রণেতাদের সুযোগ দেয়ার জন্য ‘অবিলম্বে পার্লামেন্ট অধিবেশন ডাকার’ আহ্বান জানিয়েছে।
সিরিসেনা বিতর্কিত সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহেন্দ্র রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। তার এই পদক্ষেপ শ্রীলঙ্কাকে রাজনৈতিক জটিলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
বিক্রমাসিঙ্ঘে ও তার দল সিরিসেনা কর্তৃক তাকে বরখাস্তের বিষয়টি বেআইনি ঘোষণা করতে আদালতের প্রতি আবেদন জানাতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে প্রতিবেশী দেশ ও আঞ্চলিক শক্তি ভারত পার্লামেন্ট অধিবেশনের ডাক দেয়ার জন্য সিরিসেনার ওপর চাপ দিচ্ছে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।
বিক্রমাসিঙ্ঘে (৬৯) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ছাড়তে অস্বীকার করেছেন। তার সমর্থকরা বাসভবনে তাকে চারপাশ থেকে বেরিক্যাড দিয়ে রেখেছে এবং বাইরে বৌদ্ধ সন্যাসীসহ ১ হাজারের বেশি সমর্থক সমাবেশ করছে। এরা তার পক্ষে স্লোগান দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাকে বেআইনিভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তিনি পার্লামেন্টের একটি জরুরি অধিবেশন চান। যাতে করে তিনি পার্লামেন্টে তার পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারেন।
পার্লামেন্টের স্পিকার কারু জয়সুরিয়া রোববার বিক্রমেসিংহের বরখাস্তকে অবৈধ বলার পর তিনি তার অবস্থান ধরে রাখতে জোর পান।
পার্লামেন্টে অপর প্রার্থী নিজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ না করা পর্যন্ত স্পীকার প্রেসিডেন্টের কাছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিক্রমাসিংহের সকল সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানান।
এদিকে রাজধানী কলম্বোতে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সকল পুলিশের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিক্রমাসিংহের সমর্থক কয়েকজন আইনপ্রণেতা অবিলম্বে পার্লামেন্ট অধিবেশন ডাকা না হলে রাজপথে সহিংসতার হুমকি দিয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, জনতা বিক্রমাসিঙ্ঘের সমর্থক জ্বালানীমন্ত্রী ও সাবেক ক্রিকেটার অর্জুনা রানাতুঙ্গাকে পণবন্দি করতে গেলে তার একজন দেহরক্ষী জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে একজন নিহত হয়।
এদিকে বিরোধী দলীয় নেতা রাজাবারোথিয়াম সাম্পানথান অবিলম্বে পার্লামেন্ট অধিবেশন ডাকতে স্পিকার জয়সুরিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন